প্রতিটি জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গণ্য হয়। যেহেতু পারিবারিক আদালতের মামলা সিভিল বা দেওয়ানী প্রকৃতির বিধায় সকল পারিবারিক সমস্যার সমাধান এখানে পাওয়া যাবে এমনটা ভাবা সঠিক নয়।
পারিবারিক আদালতে মূলত চারটি পারিবারিক সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়।
১. বিবাহ বিচ্ছেদ
২. দাম্পত্য সর্ম্পক পুনরুদ্ধার
৩. মোহরানা/ ভরণপোষণ
৪. সন্তানের অভিভাকত্ব ও তত্ত্বাবধান
(১)বিবাহ বিচ্ছেদ (Dissolution of Marriage):
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৭ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে যেকোন পদ্ধতিতে তালাক ঘোষণার পর সাথে সাথে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে।তালাকের নোটিশের একটি কপি স্ত্রীকে ও প্রদান করতে হবে। তারপর চেয়ারম্যান উক্ত নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মাথায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোষ-মীমাংসার লক্ষ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবেন।সালিশী পরিষদ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করতে ব্যর্থ হলে চেয়ারম্যানের নিকট নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পর তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
চেয়ারম্যান বলতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র,ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চেয়ারম্যানের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তিকে বুঝাবে। [রেফারেন্সঃ ধারা-২(খ) মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ,১৯৬১]।
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করা যাবে। এই আইনের ৫ ধারাতে বলা আছে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর বিধানাবলী সাপেক্ষে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। তার মানে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশের মাধ্যমেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে।
(২)দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার (Restitution of Conjugal Rights):
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারে। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া বিবাহের কোনো পক্ষ যদি নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করে অথবা বৈবাহিক দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ (aggrieved person) পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারবে।
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ-১৯৮৫ এর ২২ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হলে কোর্ট ফি ২৫ টাকা দিতে হবে। সে অনুযায়ী দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় কোর্ট ২৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় ৩০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়।কারণ এই ধরনের মামলা এক প্রকার ঘোষণা প্রকৃতির মামলা। আদালত এই মর্মে ঘোষণা প্রদান করেন যে স্বামী যেহেতু স্ত্রীর প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে সেহেতু স্ত্রী স্বামীর সাথে বসবাস করবে।
(৩) দেনমোহর/মোহরানা(Dower):
দেনমোহর স্ত্রী মাফ করে দিলেও স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য। দেনমোহর প্রকৃতপক্ষে ঋণের সমতুল্য। স্বামীর মৃত্যুতে দেনমোহর অনাদায়ের স্ত্রীর অধিকার রহিত হয় না। স্বামী জীবিত থাকা অবস্হায় স্ত্রীর মৃত্যু হলে স্ত্রীর ছেলেমেয়ে ওই দেনমোহর পিতার নিকট থেকে আদায় করে নিতে পারবেন। তবে সেটা স্ত্রীর মৃত্যুর ৩ বছরের মধ্যে আদায় করতে হবে।
(৪) ভরণপোষণ(Maintenance):
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের ২(খ) ধারা অনুযায়ী স্বামী ২ বছর যাবত স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে অবহেলা করলে অথবা ২ বছর যাবত স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা করতে পারবে। একইভাবে স্বামীকে ভরণপোষণ প্রদানে বাধ্য করতে পারবে।একজন পুরুষ তার স্ত্রীর পাশাপাশি সন্তানকেও ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। ছেলে সন্তানকে বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান হলে বিবাহের আগ পর্যন্ত ভরনপোষণ দিতে হবে।
পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন,২০১৩ এর ধারা ৩ অনুযায়ী প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে।