

স্বামী বা স্ত্রী যেকোন এক জন বিদেশ থেকে কি দেশে থাকা ব্যক্তি কে আইন অনুসারে তালাক দিতে পারবে? হ্যাঁ, স্বামী বা স্ত্রী যেকোন একজন বিদেশ থেকে দেশে থাকা ব্যক্তিকে আইন অনুসারে তালাক দিতে পারবে।
বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে হলে দেশে কোন নিকটাত্মীয় কিংবা বিশ্বস্ত কাউকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। এ তালাক প্রদানের ক্ষমতা হচ্ছে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী বা আমমোক্তারনামা। এটি হচ্ছে একটি আইনগত দলিল। ষ্ট্যাম্প এ্যাক্ট ১৮৯৯ এর ২(২১) উপ ধারা অনুসারে যে দলিল দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষমতা দেয়া হয় তাকে আমমোক্তারনামা দলিল বলে। এ ক্ষেত্রে যাকে আমমোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি আপনার পক্ষে আপনার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করবেন। তবে আমমোক্তারনামা দলিলে স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যাকে পাওয়ার বা ক্ষমতা দেওয়া হলো তিনি শুধু তালাক কার্যাবলী সম্পাদন করতেন পারবেন।
তবে মধ্যপ্রাচ্য ব্যাতীত বিশ্বের সকল দেশের ক্ষেত্রে আপনি এই পদ্ধতি অনুসরন করে তালাক দিতে পারবেন। আর মধ্যপ্রাচ্যে যদি আপনি অবস্থান করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশে এসে তালাক প্রদান করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে থেকেও তালাক প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা যায় কিন্তু তালাক সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশেে এসেই।
এবার আপনার করণীয়সমূহ নিম্নরূপ :
সহজ করে বলতে গেলে মোক্তারনামা বিদেশ থেকে মুসাবিদা করে দেশে পাঠানো যায় আবার দেশে কোনো আইনজীবী দিয়েও ইংরেজিতে মুসাবিদা করিয়ে বিদেশে আমমোক্তারদাতার কাছে পাঠানো যায়। তবে দেশ থেকে ড্রাফটিং করে বিদেশে পাঠানো ভালো। দ্বিতীয়ত, যে দেশে ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদিত হবে সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দাতা স্বাক্ষর করবেন এবং কনস্যুলার কর্তৃক তা সত্যায়িত হওয়ার পর আমমোক্তারদাতা তার ক্ষমতা আমমোক্তার গ্রহীতা বা অ্যাটর্নির বরাবরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবেন। তৃতীয়ত, আমমোক্তার সাহেব ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী সচিব বা কনস্যুলার থেকে সত্যায়িত করে নেবেন।
এরপর আমমোক্তারদাতা ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(১) ধারার বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থানরত স্বামীর পক্ষে স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/সিটি কর্পোরেশন মেয়রকে ওই তালাকের নোটিশ রাষ্ট্রীয় ডাকযোগে এডি সহযোগে প্রেরণ করবেন। সেই সাথে তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে তখনই/ পরবর্তী সময়ে/ যথাশীঘ্রই সম্ভব। এরপর আপনার তালাকের মেয়াদ শুরু হয়ে যাবে। তার ৯০ দিন পর আপনার তালাকটি কার্যকর হবে।