বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজ: আইনগত প্রক্রিয়া ও আপনার অধিকার

বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজ একটি জনপ্রিয় ও আইনসিদ্ধ বিবাহ প্রক্রিয়া, যা বিশেষত যেসব দম্পতি পারিবারিক বাধা বা সামাজিক চাপে বিবাহ করতে পারেন না, তাদের জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প। এই ব্লগ পোস্টে আমরা কোর্ট ম্যারেজের আইনি দিক, প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করব।

কোর্ট ম্যারেজ কী?

কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত বোঝানো হয় আইন অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া। এটি মূলত দুইভাবে সম্পন্ন হতে পারে:

  1. কাজী অফিসের মাধ্যমে (মুসলিমদের জন্য): মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে কাজীর মাধ্যমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
  2. নোটারি পাবলিক ও রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে: অমুসলিমদের জন্য নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে এবং রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন করা হয়।

কোর্ট ম্যারেজের আইনি ভিত্তি

বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজ সংক্রান্ত আইন নিম্নলিখিত আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়:

  • মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪
  • বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ (অমুসলিমদের জন্য)
  • খ্রিস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২
  • হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২

কোর্ট ম্যারেজের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ

কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:

  1. বয়সসীমা:
    • বর-এর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
    • কনে-এর ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
  2. উভয়পক্ষের সম্মতি:
    • বিবাহের জন্য বর ও কনের পরস্পরের সম্মতি থাকা বাধ্যতামূলক।
  3. দুইজন সাক্ষী:
    • কমপক্ষে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী থাকতে হবে।
  4. বৈবাহিক অবস্থা:
    • কোনো পক্ষ যদি পূর্বে বিবাহিত হয়ে থাকে, তাহলে বৈধভাবে বিবাহবিচ্ছেদ (ডিভোর্স) হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

কোর্ট ম্যারেজের ধাপসমূহ

১. আবেদনপত্র পূরণ

বর ও কনে সংশ্লিষ্ট কাজী অফিস বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহের জন্য আবেদন করতে হবে।

২. প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা

কোর্ট ম্যারেজের জন্য নিম্নলিখিত নথিপত্র প্রয়োজন:

  • উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম সনদ
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • পূর্ববর্তী বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • দুইজন সাক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্র

৩. বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ও এফিডেভিট সম্পাদন

কাজী অফিসে মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করা হয়। এরপর রেজিস্ট্রার অফিসে বিবাহ নিবন্ধন করা হয়।

৪. বিবাহ সনদ সংগ্রহ

বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বিবাহ নিবন্ধন সনদপত্র (Marriage Certificate) সংগ্রহ করতে হবে।

কোর্ট ম্যারেজের আইনি সুরক্ষা

যদি কোনো পরিবার বা সমাজ কোর্ট ম্যারেজে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • পুলিশি সহায়তা নেওয়া: স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) বা অভিযোগ দায়ের করা যায়।
  • আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা: হাইকোর্টের মাধ্যমে বিবাহের বৈধতা নিশ্চিত করা যায়।
  • পারিবারিক আদালতে আইনি সহায়তা চাওয়া: বিবাহ সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে পারিবারিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে।

উপসংহার

কোর্ট ম্যারেজ বাংলাদেশের আইনের অধীনে একটি স্বীকৃত ও বৈধ পদ্ধতি। যদি আপনি কোর্ট ম্যারেজ করতে চান বা এই বিষয়ে আইনি পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের ল ফার্মের অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ আইনি সহায়তা প্রদান করব।

আপনার যেকোনো আইনি সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these